অটিজম এর কিংবদন্তী টেম্পল গ্ৰ্যান্ডিন
টেম্পল গ্ৰ্যন্ডিন নিজে অটিস্টিক। কিন্তু পেশাগতভাবে তিনি একজন সফল নারী। তিনি অটিস্টিক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন যিনি অটিজম সম্পর্কে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত অন্তর্দৃষ্টিগুলি নথীভুক্ত করেন। তিনি একজন প্রানীবিজ্ঞানী এবং অটিজমের সক্রিয় মুখপাত্র। পশুসম্পদ শিল্পের পরামর্শদাতা হিসেবে তিনি নিজের উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
1947 সালের 29শে আগস্ট আমেরিকার বোস্টনে তিনি জন্মগ্ৰহন করেন। শৈশবে 2-2.5 বছর বয়সে তিনি কথা বলতে অক্ষম ছিলেন এবং অন্যান্য আচরনগত সমস্যা ছিল।Temple Grandin এর মা Anna Eustacia Purves ছিলেন একাধারে অভিনেত্রী ও সুগায়িকা।বাবা Richard McCudy Grandin ছিলেন Real Estate agent।
ছোট্ট টেম্পলের বিভিন্ন সমস্যার কারনে যখন তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় ডাক্তার তার বাবা মা কে জানান টেম্পলের Brain damage আছে। এবং তার জন্য তাকে বিশেষ স্কুলে ভর্তি করতে হবে।এবং বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ তাকে দিতে হবে।
টেম্পলের মা ছিলেন একজন লড়াকু মহিলা। তিনি চেয়েছিলেন টেম্পলকে সাধারণ ছেলেমেয়ের মতো মানুষ করতে।ডাক্তারের কথা মত বিশেষ স্কুলে না দিয়ে তাকে সাধারণ নার্সারি স্কুলে ভর্তি করেন।
ছোট্ট টেম্পলের জন্য একজন স্পীচ থেরাপিস্ট এবং তার সঙ্গে শিক্ষামূলক খেলার একজন সহযোগী নিযুক্ত করেন। সাধারণ স্কুলে পড়াশোনার সময় তার উচ্চ আই.কিউ চিহ্নিত হয়।তিনি পরবর্তীতে অটিস্টিক স্যাভান্ট ।
তিনি স্কুলে পড়াকালীন সময়ে পুনরাবৃত্তি মূলক কথা বলতেন বলে তার সহপাঠীরা তাকে টেপ রেকর্ডার বলে ঠাট্টা করত। ছোট্ট টেম্পল এইসব এর জন্য অত্যন্ত বিমর্ষ থাকত এবং মাঝে মাঝে প্রচন্ড রেগে যেত।15বছর বয়সে একবার টেম্পল আ্যরিজোনায় এক আত্মীয়ের খামারবাড়ি গিয়ে সেখানকার প্রানীদের প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণ বোধ করেন। সেই আকর্ষণ পরবর্তীতে ইতিহাসে পরিনত হয়।1970সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক হন এবং 1975 সালে প্রানীবিঞ্জানে স্নাতোকত্তর ডিগ্ৰী অর্জন করেন।1989 সালে ডক্টরেট উপাধি পান।1990 সাল থেকে তিনি প্রানীবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন আমেরিকার কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে।
গ্ৰান্ডিন নিজে অটিজম আক্রান্ত হওয়ার কারনে অত্যন্ত সংবেদনশীল শীল ছিলেন। পরিবেশের সামান্য তম পরিবর্তন তাঁকে উদ্বিগ্ন করত। তিনি ভয় সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। সামান্য শব্দস্রোত তাকে ভীত করে তুলত।এই অতি সংবেদনশীলশীলতা প্রানী ও অটিস্টিক উভয়ের ক্ষেত্রেই খুব সাধারণ।তাই তিনি উভয় দলের এই উদ্বেগ দূর করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। বিদ্যালয়ে থাকাকালীন নিজের স্নায়বিক উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য তিনি একটি স্কুইজ মেশিন বা আলিঙ্গন মেশিন আবিষ্কার করেন। অটিস্টিক ব্যক্তিরা তখন প্রচন্ড ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে তখন এই মেশিনের সাহায্যে তাদের স্নায়বিক উত্তেজনা প্রশমিত হয়। তিনি পরবর্তী কালে গবাদিপশুর টীকাকরন বা তাদের যখন জবাই করার জন্য প্রস্তুত করা হয় তখন এই মেশিনের ব্যাবহার করতে বলেন।
গ্ৰ্যান্ডিন এইভাবে পশুসম্পদ শিল্পের পরামর্শদাতা হিসেবে নিজের উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি গবাদিপশুদের একটি শালীনজীবন এবং যন্ত্রনাহীন মৃত্যুর প্রতি ওকালতি করে সারাজীবন যুদ্ধ করছেন।এই বিষয়ে বহু গবেষণা পত্র তিনি প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও তিনি বহু বই লিখেছেন। (Thinking in picture,Animals in Translation, The Autistic Brain)
অটিস্টিক শিশুদের উন্নতির জন্য তিনি বিরামহীন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর মতে অটিস্টিক শিশুরা ভিন্নভাবে চিন্তা করতে সক্ষম।এবং তিনি বলেন এরা অনেকেই ভিজ্যুয়াল চিন্তাবিদ। এদের সমস্ত চিন্তাভাবনা যেন ছবির মাধ্যমে।এরা সব বিষয়ে পারদর্শী না হলেও এরা প্রায়ই এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গির সরবরাহ করে যা অন্য কারো থাকে না। তাঁর ভাষায় I am different , not less.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন