অটিস্টিক শিশুদের দৈনন্দিন কার্যাবলী তে কিভাবে দক্ষ করবেন?(How do you make autistic children more efficient in day to day activities?)
একটি শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা দৈনন্দিন কার্যাবলী সুসম্পন্ন করার শিক্ষা।যা শুরু হয় বাড়ি থেকে। বড়দের অনুকরণের মাধ্যমে।যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে নিজে নিজে খাওয়া। এছাড়াও হাতমুখ ধোওয়া, দাঁত পরিষ্কার করা, স্নান করা এইসব বিকাশমূলক কাজে শিশু ৬-৭বছরের মধ্যে পারদর্শী হয়ে যায়। কিন্তু অটিস্টিক শিশুদের জন্য এই প্রারম্ভিক কাজ গুলো একপ্রকার চ্যালেঞ্জ। একজন Occupational Therapist এইরকম শিশুদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেন দৈনন্দিন কার্যাবলী সুসম্পন্ন করতে পারার জন্য। কিন্তু বাড়িতে বাবা মা একটু তৎপর হলে নিজেরাই শিশুকে নিজের তত্ত্বাবধানের উপযুক্ত করে তুলতে পারেন।
১)খাওয়ার ব্যাপারে শিশুকে উপযুক্ত করে তোলা
সাধারণত শিশু প্রথমে যে দক্ষতা অর্জন করে তার হল নিজে নিজে খেতে শেখা। অটিস্টিক শিশুদের অনেকের অখাদ্য, কুখাদ্য মুখে পুরে দেওয়ার অভ্যাস থাকে। সেইজন্য নিজে খেতে শেখা শুরু করার আগে তাদের শেখাতে হবে কোনটি সঠিক খাদ্য এবং কোনটি অখাদ্য। এর জন্য করা যেতে পারে খাদ্য এবং অখাদ্য মিশ্রিত করে শিশু কে দিয়ে তাকে সেগুলো কে পৃথক করে দুটি আলাদা পাত্রে রেখে দিতে বলতে হবে। অবশ্যই কারো তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতে হবে। এবং শিশু কে বুঝিয়ে দিতে হবে কোনটি খাবার এবং কোনটি খাবার নয়।
এরপর শিশুকে নিজের হাতে খাওয়ানো শেখাতে হবে।
*শিশু কথা না বলতে পারলে তাকে পিকচার কার্ড দিয়ে খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধাপ গুলো বুঝিয়ে দিতে হবে।
*নিজে খাওয়ার ধাপগুলি ধীরে ধীরে শিশুর কাছে অভিনয় করে দেখাতে হবে। এবং তাকে অনুসরণ করতে বলতে হবে।
*সহজে বুঝতে পারে এইভাবে নির্দেশ দিতে হবে।যেমন ভাত মাখ, মুখে দাও,চেবাও এই ধরনের নির্দেশ।
*শিশু গান শুনতে ভালোবাসলে তাকে ভিডিও দেখিয়ে বা ছড়া শুনিয়ে খাওয়ার ধাপগুলি ধীরে ধীরে শেখানো যেতে পারে।
*শিশু কে চামচ ব্যাবহার করে খেতে শুরু করিয়ে পরে হাতের ব্যাবহার শেখানো ভালো।
*শিশু কে স্বাভাবিক পরিবেশে খেতে বসানো উচিত। এতে পরিবারের সদস্যদের দেখে সে সহজেই এই ব্যাপারে দক্ষ হয়ে উঠবে।
*নিজের হাতে গ্লাসে প্রথম থেকেই জল পান করানো অভ্যাস করাতে হবে।
দাঁত ব্রাশ
দাঁত ব্রাশ একটি প্রাত্যহিক সুঅভ্যাস। অটিস্টিক শিশুদের কিছু sensory issue থাকার জন্য এটী অনেক সময় তীব্রভাবে কষ্টকর হয়ে যায় তাদের কাছে। টুথব্রাশ এর স্পর্শ অনেক সময় ওরা সহ্য করতে পারে না। আবার কখনও টুথপেস্ট এর স্বাদ সহ্য করতে পারে না। এরজন্য এমন ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে যা খুব নরম।ইলেকট্রিক টুথব্রাশ ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন ধরনের টুথপেস্ট ব্যবহার করে দেখতে হবে কোনটি শিশুর পছন্দ।এখন বিভিন্ন কার্টুন দেওয়া সুন্দর ব্রাশ পাওয়া যায়। শিশু কে দাঁত ব্রাশ করায় মনোযোগী করার জন্য সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।
পিকচার কার্ড দেখিয়ে পরপর ধাপ গুলি শিশুকে শেখানো যেতে পারে।
মুখ হাত ধোওয়া
এই দক্ষতা শেখানোর সবথেকে ভালো উপায় অনুকরন এবং পিকচার কার্ড দেখানো।বেশ কিছু শিশু আছে যারা হাতমুখ ধুতে সাবান মাখতে বিরক্ত হয়। সেক্ষেত্রে , সাবান এর পরিবর্তে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে আবার ভিজে টিসূ পেপার ব্যাবহার করা যেতে পারে।
চুলের যত্ন
শিশুর পছন্দ মত উপযুক্ত নরম চিরূনি ব্যবহার করতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শিশু কে চুল আঁচড়ানো অভ্যাস করালে এটা তাদের কাছে বেশ মজার হবে।
স্নান
শিশুকে স্নান করাতে নিয়ে যাওয়ার আগে তাদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে হবে।কারন এরা কেউ স্নান করতে উপভোগ করে কেউ উপভোগ করে না। অনেকে সময় সাবানের রং গন্ধ শিশুর মধ্যে তীব্র বিরক্তি সৃষ্টি করে।এই বিষয়ে নজর রাখতে হবে। আবার জলের ধারার শব্দ অনেক সময় শিশুর মনে অস্বস্তি তৈরি করে।
স্নানঘরের দেওয়ালে স্নান এর পরপর পদ্ধতির স্টিকার লাগিয়ে দিলে শিশু সেটি দেখে দেখে অনুসরণ করতে পারবে। বড়দের সাথে একসাথে স্নান করলে দেখে শিখে ফেলবে।
শিশু কে যখন কিছু শেখাতে হবে তখন অবশ্যই শান্ত পরিবেশ রাখতে হবে এবং ধৈর্য্য ধরে শেখাতে হবে। তাড়াহুড়ো করলে হবে না। শিশু কে মৌখিক নির্দেশ দিলে তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।তারপর পরবর্তীতে যেতে হবে।এটি সময়সাপেক্ষ ধৈর্য্য সাপেক্ষ। কিন্তু এগুলি অনুসরন যথাযথ ভাবে অভিভাবক রাত অনুসরন করলে অবশ্যই শিশুর দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে প্রাত্যহিক জীবন যাপনে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন