অটিস্টিক শিশুর অভিভাবকরা কিভাবে নিজেদের প্রতি যত্ন নেবেন?(How do parents of am autistic child take care of themselves?)
শিশুর সুস্থতা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত বাবা মা এর সুস্থ ও সুন্দর জীবন এর সঙ্গে।"আপনার সন্তানের অটিজম আছে"। এই শব্দবন্ধ টি শোনার পর অবধারিত ভাবে অভিভাবকরা মানসিক ভাবে মর্মাহত হয়ে পড়েন। প্রথমেই তাঁরা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেন সত্যিই তাঁর সন্তানের অটিজম আছে। কিন্তু যখন বিশ্বাস করেন তখন অদ্ভুত এক দোলাচল মানসিক অবস্থার মধ্যে থাকেন।প্রচন্ড দুঃখজনক মনে হয় জীবনকে। আবার প্রচন্ড রাগ হয়। তবে দুঃখ বা রাগ এই দুটি মনের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এবং এগুলি প্রকাশ করার অধিকার আমাদের আছে। এগুলো অবশ্যই আপনার সন্তানের অটিজম নির্ধারিত হওয়ার পর আপনার মানসিক চাপ এর একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।এই প্রতিক্রিয়া গুলি আপনি আপনার সুবিধা জনক উপায়ে অবশ্যই প্রকাশ করবেন।এমন সময় আসবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ও একাকী বোধ হবে।যখন আপনি বিভিন্ন উৎস থেকে ক্রমাগত জানতে থাকবেন অটিজম একটি জীবনব্যাপী সমস্যা। আবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ এর সময়ের অভাবের কারণে একাকীত্ব আসতেই পারে।
ভবিষৎ সম্পর্কে আবেগ এবং উদ্বেগ দুই তীব্রভাবে তাড়িত করে মনকে। বেদনাদায়ক আবেগ খুব স্বাভাবিক।এই আবেগ এবং অনুভূতি আপনার সন্তানের জন্য যুদ্ধ করতে আপনাকে প্রস্তুত করবে।
আপনার সন্তানের অটিজম অভিভাবক হিসাবে আপনার ভূমিকার অনেক পরিবর্তন ঘটাবে।এই নতুন ভূমিকায় অবশ্যই কিছু নেতিবাচক ও কিছু ইতিবাচক অভিজ্ঞতা
থাকবে। এবং বেশ কিছু নতুন অনুভূতির আপনার হবে---
*অটিজম আক্রান্ত শিশুর যত্ন নেওয়ার দৈনন্দিন দায়িত্ব প্রচন্ড বোঝা মনে হতে পারে।
*অটিজম বিশেষজ্ঞ নিজে হয়ে ওঠার জন্য রীতিমতো চাপ অনুভব করতে পারেন।
*শিশু এবং পরিবারের ভবিতব্য নিয়ে প্রচন্ড উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে পারেন।
*পারিবারিক কাজ, দৈনন্দিন কাজ, অটিস্টিক শিশুর কাজ ইত্যাদি পরিচালনা করতে গিয়ে ভারসাম্যহীনতায় ভুগতে পারেন।
*নিজের অনুভূতি প্রকাশ কম করতে চাইবেন।
*ক্রমাগত উদ্বেগ কর্মজীবন কে প্রভাবিত করতে পারে।
এইসময় একান্তভাবে দরকার নিজেকে আরও বেশি করে উজ্জিবীত করার। নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার। জীবনের ম্যারাথন দৌড়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
• প্রত্যক দিন মাত্র 15 মিনিট হলেও নিজের জন্য রাখুন। নিজের যত্ন করুন। পারলে একটু মেডিটেশন করুন।
•দিনান্তে যে কাজ গুলো করতে পেরেছেন তার একটা তালিকা তৈরী করুন।যা আপনার পরের দিন টিকে খুব সুন্দর ভাবে আরম্ভ হতে সাহায্য করবে।
•জীবনের কোনো কিছু একদম সঠিক হয় না।প্রত্যেক পরিস্থিতির ভালো মন্দ দুই দিক আছে। ভালো দিকে ফোকাস করবেন আপনার জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
•পরিবারের দৈনন্দিন রুটিন সম্ভব হলে মান্যতা দিন। পরিবারের প্রথা বিভিন্ন উৎসবে যোগদান করুন। পরিবারের সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে।
•নিজের প্রতি আস্থা রাখুন। কিছু তো সময় লাগবে নিজের সন্তানের সমস্যা এবং তার প্রভাব পরিবারে কিভাবে পড়ছে তা বোঝার জন্য। আপনার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত যাবতীয় স্বপ্ন থেকে আপনি এখন বিচ্যূত। নিজেকে সময় দিন পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করার জন্য। কষ্ট হবে। কিন্তু যখন দেখবেন আপনার শিশুর উন্নতি হচ্ছে সেই আনন্দের তীব্রতা কিন্ত্ত অনেক বেশি।
•বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কাজ করুন। আপনার সন্তানের অটিজম নির্ধারনের আগে আপনি যা পছন্দ করতেন সেই গুলো আবার করতে শুরু করুন।আপনি শুধু একটি অটিস্টিক শিশুর অভিভাবক নন এর বাইরেও আপনার পরিচিতি তৈরি করুন।
•বন্ধুদের জন্য সামান্য হলেও সময় দিন। দীর্ঘস্থায়ী সঠিক বন্ধুত্ব সবচেয়ে কঠিনতম সময়ে সঠিক পথ দেখায়।
•অটিজম সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। নিজের সমস্যা সহজেই শেয়ার করতে পারবেন ও সহজে সমাধান পাবেন। নিজেকে একা মনে হবে না।
•বৈবাহিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখুন। অটিস্টিক শিশুদের বাবা মা কে নিজেদের অনেক বেশি সংযুক্ত রাখতে হবে।বাবা মা দুজনকে সন্তানের সঠিক তত্ত্বাবধায়ক হতে হবে। তাঁরা দুজনই সন্তানের উন্নতির জন্য যৌথভাবে তৎপর না হলে শিশুর যথার্থ উন্নতি হবে না। শিশুর জন্য বৈবাহিক সম্পর্কের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
মা বাবা মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকুন। নিজের যত্ন করুন। শিশু ভালো থাকবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন