অটিজম নিয়ন্ত্রনে মিউজিক থেরাপি(music therapy and autism)

যে শব্দ মানুষের অনুভূতিকে আন্দোলিত করে তাই সঙ্গীত। বহু প্রাচীন কাল থেকেই সঙ্গীত মানুষ এর সঙ্গী।তার সে বিনোদনের অঙ্গ হিসাবেই হোক বা অনুভূতির প্রতি ফলক হিসাবেই হোক।

প্রাচীন কাল থেকেই সঙ্গীত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী সঙ্গীতের জাদুকরী ক্ষমতা সম্পর্কে অনেক ধারনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।পূর্বে ধারনা ছিল কোষে কোষে সঙ্গীত কম্পন সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিক ধারনা সঙ্গীত জীবের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপকে প্রভাবিত করে। সঙ্গীত থেরাপির জন্য একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই আবির্ভূত হয় এবং প্রায় ১৯৫০ সাল থেকে মিউজিক থেরাপি শব্দটি ব্যবহার হতে থাকে। সমসাময়িক চিকিৎসা বিজ্ঞানে সঙ্গীত থেরাপি চিকিৎসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষত মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যাবহৃত হয়।

মিউজিক থেরাপি
সঙ্গীত যোগাযোগের একটি অতি প্রাচীন রূপ। সমস্ত মানব সংস্কৃতির কাছে সঙ্গীত যোগাযোগের একটি অতি সাধারণ মাধ্যম। এটির জন্য কোনো মৌখিক ক্ষমতার প্রয়োজন নেই। সঙ্গীত সকলের স্বাদ এবং চাহিদা অনুযায়ী  অভিযোজিত হয়।  সঙ্গীত থেরাপি  হল সঙ্গীত কে ব্যবহার করে যেসব ব্যক্তিদের মধ্যে ভাবনা, চিন্তা,একাগ্ৰতা , মানসিক চাপ , মানসিক স্বাস্থ্য বিভিন্ন কারনে বিঘ্নিত হয়েছে সঙ্গীতের মিথস্ক্রিয়া ব্যাবহার করে সেই সব ব্যাক্তিদের সাহায্য করার একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কৌশল। সঙ্গীত শুধুমাত্র ভাষাগত দক্ষতা, স্মৃতিশক্তির উন্নতি, মনোযোগ কেন্দ্রীভুত করার জন্য নয়, শারীরিক সমন্বয়  এবং বিকাশের ক্ষেত্রেও আশ্চর্যজনক ভূমিকা দেখিয়েছে।এই থেরাপি মাথাব্যথা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হার্টের অসুখ, স্ট্রোক,অ্যলঝাইমার, অটিজম, দীর্ঘস্থায়ী মাথা ব্যাথা সহ আরো কিছু অসুখের প্রতিকারের ক্ষেত্রে কার্যকর থেরাপি। সঙ্গীত একাগ্ৰতা, বুদ্ধিমত্তা,শিখন,কর্মক্ষমতা, শরীরের আন্দোলন এবং সমন্বয়, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। মেজাজ নিয়ন্ত্রন করে , বিষন্নতা দূর করে। আমাদের ব্যক্তিত্বের নেতিবাচক দিক যেমন উদ্বেগ,ক্রোধ নিয়ন্ত্রনে সহায়ক সঙ্গীত।তাই বর্তমানে মিউজিক থেরাপি চিকিৎসাবিজ্ঞানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

অটিজম এবং মিউজিক থেরাপি
অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের (১০এর মধ্যে ১) একটি বিশেষ অনুরাগ থাকে জ্ঞানীয় দক্ষতায়।(চিন্তা করা, মনোযোগ দেওয়া,একাগ্ৰতার ক্ষমতা) সঙ্গীত বা বাদ্যযন্ত্রের দক্ষতা এমনি এক জ্ঞানীয় দক্ষতা। অটিস্টিক ব্যক্তিরা কখনো কখনো সঙ্গীত বা বাদ্যযন্ত্রে অসাধারণ পারদর্শী হয়। একবার শুনেই মনে রাখতে পারে গান বা আবৃত্তি বা বাজনার নিখুঁত সুর।মনে করা হয় মনোযোগ সাধারণত সামাজিক মিথস্ক্রিয়া দ্বারা শোষিত হয়। কিন্তু এই ধরনের ব্যক্তিদের সামাজিক মিথস্ক্রিয়া খুব সামান্য । তাই কোন কোন বিষয়ে তাদের একাগ্ৰতা সাধারণের থেকে অনেক বেশি।

বেশ কিছু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা যারা কথা বলে না বা কম কথা বলে যাই হোক না কেন মনোরম সঙ্গীত এর সংস্পর্শে এলে জ্ঞান ও ভাষা উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়।যা স্পীচ থেরাপির  বিকাশের ক্ষেত্রে দারুন প্রভাব ফেলে। সঙ্গীত তাদের মনোযোগ বৃদ্ধিও করে। অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি যদি সাংঘাতিক উদ্বিগ্ন থাকে বা ভীষন উত্তেজিত থাকে তাহলে মনোরম শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বাজানোর সাথে সাথে  সে শান্তি অনুভব করে। সঙ্গীত মস্তিস্কে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তাই মানসিক চাপের সাথে বেমানান। বেশিরভাগ গবেষক সঙ্গীত নির্বাচনের ক্ষেত্রে মনোরম শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরের উপর জোর দিয়েছেন। একটি অটিস্টিক শিশু যখন কিছু তেই শান্ত হতে পারে না অথবা যখন দৌড়ানো থামাতেই পারে না তখন যদি কোনো স্নিগ্ধ গানের সুর বাজানো হয়  তাহলে অবশ্যই সে শান্ত হবে এবং গানের প্রতি কৌতুহল পূর্ণ অভিব্যক্তি সে প্রকাশ করবে।

মিউজিক  থেরাপিস্ট অবশ্যই শিশুর চাহিদার উপর ভিত্তি করে একটি স্বতন্ত্র সঙ্গীত থেরাপি প্রোগ্ৰাম তৈরী করবে।একজন মিউজিক থেরাপিস্ট অবশ্যই শিশুর ক্ষমতার মূল্যায়ন করে তবেই  শিশুর প্রোগ্ৰাম স্থিরীকৃত করবেন। মিউজিক থেরাপি প্রায়শই অন্যান্য থেরাপির সঙ্গে ব্যাবহার করা হয়। মিউজিক থেরাপি র সঙ্গে বিভিন্ন থেরাপিস্ট ,চিকিৎসক এবং মনোবিজ্ঞানীদের কঠোর সহযোগিতা প্রয়োজন।

মিউজিক থেরাপির সময় শিশু দের সম্পুর্ন স্বাধীনতা থাকে তাদের পছন্দ মত আচরন প্রকাশ করার। তারা টুং টাং আওয়াজ করতে পারে, চিৎকার করতে পারে,আনন্দ এবং উত্তেজনাপূর্ণ তৃপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে।

অটিজমে মিউজিক থেরাপির সুবিধা কি কি?
• সামাজিক এবং যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
•আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
•সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে।
•আবেগ প্রকাশের পথ অন্বেষণ করতে পারে।
•পরিবেশ সংক্রান্ত তথ্য গ্ৰহন , বোঝা এবং উপযুক্ত শারীরিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে দক্ষতা বাড়ায়।
•ভাষা বোঝায় দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
•যোগাযোগের ইচ্ছাকে উৎসাহিত করে।
•সৃজনশীল আত্মপ্রকাশকে উদ্ভাবন করে।
•অ-যোগাযোগমূলক (অর্থহীন, অপ্রাসঙ্গিক) বক্তৃতা হ্রাস করে।
•ইকোকোলিয়া অর্থাৎ অনিয়ন্ত্রিত এবং অন্য দের দ্বারা উচ্চারিত শব্দের তাৎক্ষনিক পুনরাবৃত্তি হ্রাস করে।



,


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অটিস্টিক শিশুর অভিভাবকরা কিভাবে নিজেদের প্রতি যত্ন নেবেন?(How do parents of am autistic child take care of themselves?)

আপনি কি করে বুঝবেন আপনার সন্তানের অটিজম আছে?(How to understand if your child has autism)

অটিস্টিক শিশুদের দৈনন্দিন কার্যাবলী তে কিভাবে দক্ষ করবেন?(How do you make autistic children more efficient in day to day activities?)